সমস্ত লেখাগুলি

ত্রিবিধ -
চয়ন আচার্য্য
Nov. 21, 2024 | সমাজ | views:284 | likes:0 | share: 0 | comments:0

প্রথম:

পরিবেশ বান্ধব সবুজ আতশ বাজি কতটা পরিবেশ বান্ধব?

মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আদেশ অনুযায়ী পরিবেশ বান্ধব সবুজ আতশবাজি ব্যবহারের নিদান দিয়েছে রাজ্য সরকার। সবুজ আতশবাজি ঠিক কতটা পরিবেশ বান্ধব? একটু খতিয়ে দেখা যাক। আতশবাজি বলতে সাধারনত আমরা বুঝি যে বাজি আকাশে উঠে ফাটে এবং রংবেরং এর ফুলকি ছড়ায়। এই বাজি গুলিতে থাকে বেরিয়াম নাইট্রেট,(সবুজ আলোর জন্য) পটাশিয়াম নাইট্রেট, অ্যালুমিনিয়াম পাউডার(রুপোলী ফুলকির জন্য), পটাশিয়াম ক্লোরেট (চলতি ভাষায় কলেরা পটাশ) এবং সালফার। অধম লেখক বাল্যকালে তুবড়ী বানানোয় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে নিবেদন করছে এই রাসায়নিক পদার্থ পুড়লে যে ক্ষতিকারক ধোঁয়া উৎপন্ন হয় (বিশেষ করে সালফার ডাই অক্সাইড ও কার্বণ মনোক্সাইড) পরিবেশের সমগ্র জীবকূলের জন্য প্রাণঘাতী ও ক্ষতিকারক। সবুজ রং হলেই যে তা প্রাকৃতিক এবং পরিবেশবান্ধব এরকম মন্তব্য রীতিমতো অর্বাচীনসুলভ। ভিক্টোরিয়ান ইংলন্ডে 'শিলোজ গ্রীণ' নামের সবুজ রং বানিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা হত যা ওয়ালপেপারে ব্যবহার করা হত। প্রচুর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই রং কারণ আর্সেনিক ছিল এর একটি অন্যতম উপাদান। পরিশেষে বলতে চাই, পরিবেশবান্ধব বাজি আর ঝগড়াবান্ধব স্ত্রী হল কবির কল্পনা। বাস্তবে ইহার অস্তিত্ব নাই। আর প্রকৃতিমাতার ধ্বংসসাধন করে মাতৃপূজা আমাদের মত হিপোক্রিটরা আমরণ চালিয়ে যাবে। সুতরাং এত লম্বা লেখা বৃথা পন্ডশ্রম।

দ্বিতীয়:

রথযাত্রা: একটি বাল্য স্মৃতি ও উপলব্ধি

  যখন খুবই ছোট বয়স হয়তো নয় বা দশ তখন রথের দিন মানে একটা উৎসবের দিন। শুরু হয়েছিল একতলা একটা কাঠের রথ থেকে, একই রথ বছর দুয়েক চালানোর পর প্রমোশন পেলাম। দুতলা কাঠের রথ জুটলো। রঙিন কাইট পেপার দিয়ে রথ সাজানো, ফুলের মালা দিয়ে জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রা মূর্তিগুলিকে সাজানো, সেকি উত্তেজনা! যখন একতলা রথ ছিল তখন একটাই মূর্তি ব্যবহার করতাম যেটার দুপাশে জগন্নাথ বলরাম আর মাঝে সুভদ্রা। যখন দু তলা রথ পেলাম তখন আলাদা আলাদা মূর্তি ওপর তলায় জগন্নাথ নিচের তলায় বলরাম সুভদ্রা। অনেক পরে প্রমোশন হয়ে তিন তলা রথ জুটে ছিল, যেখানে তিনজনকে আলাদা আলাদা ফ্লোরে একোমোডেশন দেওয়া গেল। তার আগে অবধি বন্ধুদের সঙ্গে তর্ক লাগতো দুতলা রথের উপরতলায় কে থাকবে? জগন্নাথ নাকি তার বড়ভাই বলরাম!এদের মধ্যে কে বড়? শ্রীজগন্নাথ! যিনি শ্রীহরি বিষ্ণুরই রূপ হিসেবে আরাধ্য নাকি তার বড় ভাই শেষনাগের অবতার বলভদ্রদেব!

 যাইহোক, একবার রথের বিকেল বেলা রথ সাজিয়ে বের হয়েছি প্রসাদ হিসেবে বাটিতে রেখেছি কিছু নকুল দানা যাকেই সামনে পাচ্ছি হাতে একটা করে নকুল দানা দিচ্ছি আর বদলে এক টাকা, দু টাকা, ৫০ পয়সা এরকম করে প্রনামী পাচ্ছি। সন্ধে ছটার সময় দেখলাম ৭ টাকা মত হয়েছে। সেখান থেকে আবার দু টাকা ইনভেস্ট করে দুটো মোমবাতি আর নকুল দানা কিনে অন্য পাড়ার দিকে এগোলাম, হাতে ঘড়ি পড়তাম না ঘুরছি তো ঘুরছি, সময়জ্ঞান আর নেই, যাকে পাচ্ছি হাতে একটা করে নকুল দানা দিচ্ছি আর প্রণামী নিচ্ছি। যখন হুশ হলো তখন বেশ রাত। গুনে গেঁথে দেখি প্রায় ৫০ টাকার কাছাকাছি খুচরো পেয়েছি। বাড়ির কাছাকাছি এসে দেখতে পেলাম সামনের ল্যাম্পপোস্টের নিচে বাবা দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে আত্মা দেহ ছাড়া হয়ে যাবার জোগাড়! তড়িৎগতিতে গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে পিঠে প্রথম চপ্পল এর বাড়িটা পড়ল। তারপর বলাবাহুল্য প্রচুর মারধর জুটলো। এখনো মনে আছে বাবার শাসন বাণী, ঘন্টা নাড়বে? পুরুতগিরি করবে বড় হয়ে?

 বর্তমানে মনে প্রশ্ন জাগে বাবা এখনকার ধর্মগুরু স্পিরিচুয়াল মোটিভেটরদের আশ্রম, বাড়ি, গাড়ি, হেলিকপ্টার এবং সেমিনার দেখলে কি ভাবতেন? সেই বাল্য বয়সেই বুঝে গিয়েছিলাম প্রায় বিনা ইনভেস্টমেন্টে ধর্মব্যবসায় কিরকম ভয়ংকর প্রফিট। যত দিন যাচ্ছে আশেপাশের পরিচিত মানুষজনগুলিকে যুক্তি,বোধ, বুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে কিরকম পাগলের মত আচরণ করতে দেখছি, ধর্মের নামে গলা কেটে ফেলা রাজনীতি,পরমতঅসহিষ্ণুতা গ্রাস করে ফেলছে এই উপমহাদেশকে।

তৃতীয়:

কাঁচা বাদাম:

 সোসাল মিডিয়ায় বীরভূমের দূবরাজপুরের ভূবন বাদ্যকরের বাদাম ফেরী করার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়ার মূল কারণ হলো ভুবনের একটি গান,যে গানটি গেয়ে সে বাদাম ফেরি করত।

গানটির কথা গুলি হল- মোবাইলের বডি ভাঙ্গা, পায়ের তোড়া, হাতের বালা থাকে যদি সিটি গোল্ডের চেন /দিয়ে যাবেন/ তাতে সমান সমান বাদাম পাবেন।/বাদাম বাদাম দাদা কাঁচা বাদাম।/আমার কাছে নাইকো কোনো ভাজা বাদাম।

 -গানটি যে ভিডিও থেকে ভাইরাল হয়, তার অডিও ক্লিপ টা নিয়ে তার সাথে কিবোর্ড স্যাম্পলিং করে, ডিজে বিট যোগ করে একটা ধামাকাদার গান ইন্টারনেটে ছেড়েছে কিছু ক্রিয়েটিভ মিউজিশিয়ান। এই গানটির একাধিক ভার্শন এখন ইন্টারনেটে সোশ্যাল মিডিয়ার সাইটগুলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দরিদ্র বাদামওয়ালার মুখের গান শুনছে বিশ্ববাসী। কিন্তু প্রশ্ন এটা যে এই অদ্ভুত বিনিময় প্রথার মাধ্যমে যে বাদাম ব্যবসা তাতে ভুবন বাদ্যকরের লাভটা কোথায়? দুঃখের বিষয় আমি দর্শকবৃন্দকে এই গানটি নিয়ে টিক টকে কোমর দোলাতে দেখেছি। কিন্তু এই প্রশ্নটা কাউকেই করতে শুনিনি। যাদবপুর ইউনিভার্সিটি তে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ই বর্জ্য সংক্রান্ত একটি প্রজেক্টে অংশগ্রহণ করায় আমার কাছে এর একটি সম্ভাব্য উত্তর আছে। ভারতে খুব জনপ্রিয় না হলেও অন্যান্য তৃতীয় বিশ্বের দেশ গুলিতে অর্থ উপার্জনের একটি নতুন অল্টারনেটিভ পেশা হিসেবে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আরবান গোল্ড মাইনিং‌। শহরে তো সোনার খনি নেই! তাহলে সোনা উত্তোলন করা হচ্ছে কোথা থেকে? এর উত্তর হলো বিভিন্ন পুরোনো ইলেকট্রনিক্স দ্রব্যের মধ্যে সোনার ব্যবহার খুবই প্রচলিত‌। কম্পিউটারের মাদারবোর্ডের, প্রসেসরের, মোবাইলের পিসিবি'র অনেক যন্ত্রাংশই সোনার তৈরি বা গোল্ড প্লেটেড। তবে এই ই-বর্জ্য থেকে সোনা সংগ্রহ সহজ নয়। ব্যবহার করা হয় নাইট্রিক অ্যাসিড সায়ানাইড এর মত ভয়ঙ্কর রাসায়নিক। সম্ভবত ভুবন বাদ্যকর ও হয়তো নিজে অথবা অন্য কারো সহায়তায় আরবান গোল্ড মাইনিং এর কাজটি করে চলেছে। মনের ইচ্ছা কাঁচা বাদাম গানটির মত যেন এই পেশা টিও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, এবং এই পেশার হাত ধরে কিছু অংশ হলেও ই-বর্জ্যের রিসাইকেলিং যেন সম্পন্ন হয়।

চয়ন আচার্য্য

L.L.B (final year) Burdwan University.

M.A Film Studies, Jadavpur University.

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86930